নাটক


 বজলুর রহমান খোকনের নাটক 


"জমিদার বাবু,,
------------
আমার লিখা মঞ্চ
নাটকের একটি দৃশ্যের
খানিকটা অংশ এখানে
তুলে ধরছি।
--------------------
পাইপ মুখে জমিদার আব্বাছ খান
ও ছাতা হাতে পেয়াদার প্রবেশ।
,
আব্বাছ খানঃ আচ্ছা পেয়াদা,
তুমি যদি আমার জমিদারির
মালিক হতে তাহলে তুমি
কি করতে?
,
পেয়াদাঃ রাজ্যের সমস্ত
প্রজা গুলোকে সুখে শান্তিতে,
বাকীটাও বলব জনাব?
,
আব্বাছ খানঃ বাকীটা আমি
বোঝতে পেরেছি। কিন্তু কি
আফসোস! পেয়াদাকি
কখনও জমিদার হয়!
আমি তোমাকে জমিদার
হবার একটা পথ বাতলে
দিতে পারি।
,
পেয়াদাঃ বলুন জনাব কি সেই
পথ, বিলম্ব যে আর সহ্য হচ্ছে
না।
,
আব্বাছ খানঃ এই নাও বন্দুক!
এর ভেতর যতগুলো গুলি
রয়েছে সব ক,টা গুলিই
আমার বুকে পুরে দাও আর
বুঝে নাও এই বিশাল জমিদারি।
কি হল নাও?
,
পেয়াদাঃ আ আমায় ক্ষমা
করুন জনাব, সামান্য
জমিদারির মোহে আমি
আমার প্রভূ ভক্তিকে
জলাঞ্জলী দিতে পারবনা।
,
আব্বাছ খানঃ মাৎ ঘাবড়াও
পেয়াদা। মনের লালিত স্বপ্নকে
বাস্তবে রুপ দিতে হলে ওসব
নীতি বাক্য ভুলে যেতে হবে।
আচ্ছা পেয়াদা, তুমি বুঝি
আমায় খুব ভাল বাস,
তাই না পেয়াদা?
,
পেয়াদাঃ হাঁ জনাব।
,
আব্বাছ খানঃ বটে! আমার সুখের
জন্য তুমি কি কি করতে পার
পেয়াদা?
,
পেয়াদাঃ মালিকের সুখের জন্যে
এই গোলাম হাসতে হাসতে
তার জীবনটাও বিলিয়ে
দিতে পারে।
,
আব্বাস খানঃ যদি তাই হয়
তবে আজ এই পবীত্র ধর্ম
গ্রন্থ কোরান ছুঁয়ে তোমাকে
শপথ করে বলতে হবে,
মালিকের মনতুষ্টির জন্য
গোলামের কাছে মালিক
যা কিছু চাইবে,, গোলাম
তাই দিয়ে পরিতৃপ্ত করবে
মালিকের প্রাণ!
,
পেয়াদাঃ এই অধমের আছেইবা কি,
আর কি দিয়েইবা পরিতৃপ্ত করব
মহামতি জমিদার প্রাণ!
,
আব্বাছ খানঃ আহ! কথা
বাড়িওনা পেয়াদা,, যা বলছি
তা পালন করার চেষ্টা কর।
,
পেয়াদাঃ ঠিক আছে জনাব,
এই আমি পবীত্র কোরআন
ছুঁয়ে শপথ করে বলছি, আজ
এই মূহুর্তে গোলামের নিকট
মালিক যা কিছু চাইবে,
গোলাম তাই দিয়ে পরিতৃপ্ত
করবে মহামতি জমিদার প্রাণ।
বলুন জনাব, কি এমন আছে
এই অধমের?
,
আব্বাছ খানঃ সে আর এমন কি!
তোমার ঘরে যে কুমারী কন্যাটি
রয়েছে তাকে আজ রাতের
জন্য আমায় উপহার দিতে
হবে।
,
পেয়াদাঃ ছিঃ জমিদার বাবু ছিঃ!
এমন একটা নিরস প্রস্তাব
আপনার মুখ থেকে বেরোবে
জানলে বহু আগেই আপনার
চাকরি ইস্তফা দিয়ে, নগরে
বন্দরে ভিক্ষে করে খেতাম
তবু আপনার মত দুঃচরিত্র
জমিদারের অধীনস্ত হতেম না।
,
আব্বাছ খানঃ পেয়াদা! মুখ
সামলে কথা বল! ভুলে যেওনা
তুমি জমিদার আব্বাছ খানের
সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছ।
,
পেয়াদাঃ অপরাধ মার্জনা করুন
জনাব। সামনের চাঁদে মেয়েটার
বিয়ে। দয়া করে ওর এতবড়
সর্বনাশ আপনি করবেন না।
,
আব্বাছ খানঃ কিযে বলনা পেয়াদা,
মাত্র এক রাত্রির জন্য বিয়ে শাদী
ঠেকে থাকবেনা। আমি ধুমধাম
করে তোমার মেয়ের বিয়ে দেব।
মাত্রতো একটা রাত! আর
পরগনার একটি কাক
পক্ষীতেও টের পাবে না।
যাও, বিলম্ব না করে এক্ষনি
তোমার মেয়ে নদীকে সাজ
গোজ করে আমার রংমহলে
নিয়ে এসো।
,
পেয়াদাঃ না! পিতা হয়ে
ঔরষজাত সন্তানের এতবড়
সর্বনাশ আমি করবনা, করতে
পারবনা।
,
আব্বাছ খানঃ তবে কি ধরে
নেব তুমি ওয়াদা ভঙ্গকারী?
,
পেয়াদাঃ এটা ওয়াদা নয়
আব্বাছ খান। একজন অসহায়
ভৃত্যের সরলতার সুযোগে
তার জাত কুল নষ্টের এক
হীন অপচেষ্টা!
,
আব্বাছ খানঃ খামোশ! তোমার
দুঃসাহস দেখে সত্যি আমি
অবাক হয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছে করছে
এই দুঃসাহসের জবাব চাবুকের
কষাঘাতে দিই।
,
পেয়াদাঃ হা হা তাই করুন।
যে শরির বাজি রেখে এতদিন
প্রভূর প্রাণ রক্ষা করেছি আজ
চাবুকের নির্মম আঘাতে তাকে
রক্তাক্ত করে দিন।
,
সহসা নায়েব প্রবেশ
-----------------
নায়েবঃ রাজি হয়ে যাও বাপু
রাজি হয়ে যাও। কি সৌভাগ্য
তোমার! জনাবের নজর খানি
কেমন চট জলদি তোমার
মেয়ের উপর পড়েছে।
,
পেয়াদাঃ চুপ কর জমিদারের
পা চাটা কুত্তা। আর একটিবার
অমন বেহায়াপনা করার চেষ্টা
করলে--
,
নায়েবঃ কি করবে কি করবে,
মারবে? দেখলেন জনাব!
আপনার সামনেই কেমন
গোখরা সাপের মতন ফস
করে উঠলো? ছি ছি ছি,
দুনিয়াটা একেবারে চুলোয় গেল।
,
অাব্বাছ খানঃ নায়েব, আমার
চাবুক খানা দাও।
,
নায়েবঃ সেকি আর বলতে হয়
জনাব? ওটা আমি সাথে করে
নিয়েই এসেছি হে হে হে,,
এই নিন।
,
আব্বাছ খানঃ বল আমার দেয়া
প্রস্তাবে তুই রাজি কি না?
,
পেয়াদাঃ না--। প্রয়োজন হলে
হাসতে হাসতে জীবনটা বিলিয়ে
দেব তবু --
,
আব্বাছ খানঃ তবেরে হারামির
বাচ্চা(প্রহার)।
,
পেয়াদাঃ আহ, আরযে সহ্য হচ্ছেনা।
দয়া করুন জমিদার বাবু, কথা দিচ্ছি,
পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হবার আগেই
মা হারা অভাগী মেয়েটাকে নিয়ে
আপনার জমিদারির সিমানা ছেড়ে
চলে যাব(হাহাকার করে ওঠে)।
,
আব্বাছ খানঃ সে সুযোগ তুমি
আর পাবেনা অপদার্থ। তার
পূর্বেই আমি তুর ভব লীলা সাঙ্গ
করে দেব(পুনঃ বেত্রাঘাত)।
,
বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে
করতে নদীর প্রবেশ।
--------------------------
নদীঃ বন্ধ করুন এ নিষ্ঠুর অত্যাচার!
ছিঃ জমিদার বাবু ছিঃ!
লজ্জা করেনা, নিজের কামনা
চরিতার্থ করতে একজন অসহায়
কর্মচারির পৃষ্ঠে চাবুক চালাতে?
,
আব্বাছ খানঃ ইয়ে- মানে নদী
তুমি হঠাৎ?
,
নদীঃ আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে
এতক্ষন আপনাদের নাটকের
দৃশ্যগুলি শ্রবণ করছিলাম মাত্র।
,
পেয়াদাঃ তুই থামলি হতচ্ছারী?
,
নদীঃ কেন থামব বাবা! যে জমিদার
বিনাদোষে একজন নিরপরাধ
প্রজার গায়ে চাবুক চালাতে পারে,
সেই পাঁষাণ পুরীতে দু বেলা দু মুঠো
ভাতের জন্য কেন পড়ে থাক বাবা?
চলে এসো বাবা, এখানে আমার
দম বন্ধ হয়ে আসছে। (যেতে উদ্যত)
,
আব্বাছ খানঃ দাঁড়াও-------।

No comments:

Post a Comment