রমজানের আয়োজনে কবি আব্দুল মান্নানের লেখা ।
::::::::পবিত্র রোজার রহশ্ব্য :::::::::
****************************প্রকাশ থাকে যে, রোজা ইমানের এক চতুর্থাংশ। কারন,এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন আস
ছাওমি নিছফুছ ছবর, রোজা সবরের অর্ধেক এবং
অন্য এক হাদিসে বলেনঃ আস ছবরু নিছফুল ইমানঃ ছবর ইমানের অর্ধেক।এ থেকে জানা গেল যে, রোজা ইমানের অর্ধেকের অর্ধেক অর্থাত এক
চতুর্থাংশ। ইসলামের সকল রোকনের মধ্যে রোজা
আল্লাহ তা'য়ালার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বিধায়
বিধায় এটা সকল রোকনের সেরা রোকন। সেমতে
আল্লাহ তা'য়ালার উক্তি রাসুলে করিম (সঃ) এক হাদিসে কুদসীতে বর্ননা করেছেন উক্তটি এই সকল সৎকাজের সওয়াব দশগুন থেকে সাতশত গুন পয্য ন্ত হবে কিন্তঃ রোজা একান্ত ভাবে আমার জন্য
বিধায় আমিই এর প্রতিদান দেব,!
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ সবর কারীদের বেহিসাব সওয়াব দান করা হবে। রোজার শ্রেষ্ঠতা প্রমানের জন্য রসুলে করিম (সঃ) এই উক্তিই যথেষ্ট। তিনি এরশাদ করেনঃ আল্লাহর কসম যার হাতে আমার
প্রান- নিশ্চয় রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তা'য়ালা র নিকট মেশক আম্বরের চেয়েও উত্তম।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ রোজাদার তার কামনা বাসনা ও পানাহার একমাত্র আমার জন্যে পরিত্যাগ করে। অতএব রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর
প্রতিদান দেব।
রাসুলে খোদা ( সঃ) বলেনঃ জান্নাতের একটা দ্বারকে বলাহয় বাবুর রাইহান"এতে রোজাদার গন
ছাড়া আর কেও প্রবেশ করতে পারবেনা। রোজাদারের কে তার রোজার বিনিময়ে আল্লাহর
দীদারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আর বলা হয়েছে। হাদিসঃ( লিছ ছোয়ীম ফারহাতানী ফারহাতুন ইনদা ইল্লা ফিতরী ফারহাতুন ইনদা লিকায়ো রব্বি) অর্থাতঃ রোজাদারের দুটি আনন্দ।
এক আনন্দ ইফতারের সময় এবং এক আনন্দ পালন কর্তার দীদারলাভের সময়। এক হাদিসে আছে প্রত্যেক বস্তুর একটি দরজা আছে।এবাদতের
দরজা রোজা। আরও বলা হয়েছেঃ রোজাদারের
নিদ্রা ইবাদত।
হযরত আবু হুরাইরা রঃ বর্নিত রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন
যখন রমজান মাস শুরু হয়,তখন জন্নাতের দরজা
উন্মক্ত হয়ে যায় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ হয়ে
যায়।শয়তানকে শিকল পরানো হয়।তখন ঘোষনা
কারী ঘোষনা করে যারা কল্যান কামনা কর তারা
অগ্রসর হও এবং যারা অনিস্ট কামনা কর তারা
সরে যাও। তোমরা অতিতে যা পাঠায়েছ তার বিনিময়ে জান্নাতে সাছন্দে পানাহার কর। এখানে
অতিত বলতে রোজার দিন বোঝানো হয়েছে।
আল্লাহ তা'য়ালা, যুবক ইবাদত কারী দ্বারা ফেরেস্তাদের মাঝে গর্ব করেন এবং বলেন হে আমার জন্য আপন কামনা বাসনা বর্জনকারী যুবক, হে আমার সন্টুষ্টিতে যৌবন অতিবাহীত কারী
যুবক, তুমি আমার নিকট ফেরেস্তাদের মতই। এবং
ফেরেস্তাদের উদ্দেশ্য বলেন আমার বান্দাকে দেখ সে আমার কারনে সে কামনা বাসনা পানাহার
পরিত্যাগ করিয়াছে।
সুত্রঃ (এহ ইয়াউ উলুমুদ্দীন)
!!! পবিত্র রোজার রহশ্ব্য -(২)!!!
*************************
আয়াতঃ ইন্নামা ইউওয়াফ'ফাছ ছবিরুনা আজরাহুম বি- গইরি হিসাব। অর্থাত, সবরকারীকে
বেহিসাব পুরস্কার দেয়া হবে। এ থেকে জানা যাই যে
সবরকারীর জন্য অগুনিত সওয়াবের স্তুপ সাজানো
হবে।, যা অনুমান করা যাইনা। আর এইরুপ হওয়াই
সমীচীন। কেননা,রোজা আল্লাহর জন্য এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারনে গৌরবোজ্জ্বল।
সকল এবাদতই আল্লাহর জন্য। তবুও রোজা কাবা
গর্হের ন্যায় প্রাধান্যযুক্ত, যদিও সমস্ত ভূ-পৃষ্টই আল্লাহর।
রোজাদ এই প্রাধান্য দুটি কারনে-১ রোজা রাখার
অর্থ কয়েকটা বিষয় থেকে বিরত থাকা এবং কয়েক
টি বিষয় বর্জন করা।আর এটি অঅভ্যন্তরীণ বিষয়
এতে এমন কোন আমল নেই, যা চোখে দেখা যাই।
অন্যান্য এবাদত মানুষের দৃষ্টিটে থাকে।কিন্তু রোজাকে আল্লাহ ব্যতীত কেও দেখেনা।(২) রোজা
আল্লাহ তা'য়ালার শত্রুর উপর চাপ সৃস্টি করে এবং
প্রবল হয়।কেননা,কামনা বাসনা হচ্ছে শয়তানের
ওসীলা বা হাতিয়ার, বা পানাহারের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনশয়তান মানুষের রক্ত চলাচলের রাস্তায় বিচরণ করে। সুতরাং ক্ষুধা তৃষ্ণা দ্বারা তার পথসমুহকে সংকীর্ন
করে দাও।এদিকে লক্ষ করে রাসুলে পাক ( সঃ)
হযরত আয়েশা (রাঃ) কে বলিয়াছিলেনঃ সর্বদা
জান্নাতের দরজায় খটখটাও।আরজ হলঃ কিসের
মাধ্যমে? তিনি বলিলেনঃ ক্ষধার মাধ্যমে।
যেহেতু রোজা বিশেষ ভাবে শয়তানের মূলোৎপাটন
করে,তার চলার পথ রুব্ধ করে,এবং সংকীর্ন করে, তাই রোজা বিশেষ ভাবে আল্লাহ তা'য়ালার সাথে
সম্পর্কযুক্ত হোওয়ার যোগ্য হয়েছে।তাই রোজাদার
কে আল্লাহ সাহায্য করেন।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ তোমরা যদি আল্লাহ কে সাহায্য কর, তবে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন
এবং তোমাদের পদযুগল সুদৃঢ় রাখবেন।মোটকথা
চেস্টা করা বান্দার পক্ষ থেকে হবে এবং বিনিময়ে
হেদায়েত তথা সৎপথ প্রদর্শন আল্লাহর পক্ষ থেকে
হবে।
একটি আয়াতের অর্থঃ আল্লাহ কোন জাতীর অবস্তা পরিবর্তন করেন না যতক্ষন তারা নিজেদের
অবস্তা পরিবর্তন না করে।পরিবর্তনের জন্য কামনা
বাসনাকে চুর্ন বিচুর্ন করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
কেননা কামনা বাসনা শয়তানের বিচরন ক্ষেত্র।যে
পয্যন্ত এই বিচরনক্ষেত্র সবুজ-শ্যমল থাকবে,
শয়তানের বিচরন বন্ধ হবেনা।আর বিচরন বন্ধ না
হওয়া পয্যন্ত আল্লাহর প্রতাপ বান্দার কাছে প্রকাশ
পাবেনা এবং দীদারের পথে পর্দা পড়ে থাকবে।
রসুলে আকরাম (সঃ) বলেনঃযদি মানুষের অন্ত্ররে
শয়তানের যাতায়াত না থাকতো, তবে মানুষ উর্ধ
জগত নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হত। এদিক দিয়ে রোজা এবাদত সমুহের দরজা ও ঢাল স্বরুপ।
সুত্রঃ ( এহয়াউল উলুম)
!!! শ্রেষ্ঠ ইমানী নসিহত!!! (৩)
************************★তুমি দুনিয়াকে সু-সজ্জিত করার যাধনায় লেগে আছ।অথচ দুনিয়া তোমাকে এখান থেকে বার করার জন্য প্রতিটি মুহুর্ত সচেষ্ট।(হযরত আবু বকর (রাঃ)
★যার বিদ্যা নেই, সে না জানে ভাল মন্দ।মখমন্ডলে
চক্ষু থাকা সত্তেও সে অন্ধ।( সালিমুল ইসলাম)
★ যে সৎ পথে চলে, সে পথ ভোলেনা(হযরত আলী
★প্রত্যক কাজেরই একটা মাধুর্য আছে,সৎকর্মের
মাধুর্য হচ্ছে সুযোগ পাওয়া মাত্রই তা করে ফেলা।
(হযরত ওমর রাঃ)
★ অন্তরে হিংসা পোষন করে অন্যের কোন ক্ষতি
করা যাইনা, নিজেরইই সর্বনাশ করা হয়। মাত্র।
(হযরত লোকমান আঃ)
★সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া কবল হওয়ার
ব্যপারে সন্দেহর কোন অবকাশ নেই।( আলহাদিস)
★যে ব্যক্তি নামাজ ঠিক মত আদায় করার অভ্যাস
গড়ে তুলতে পারে, তার নাজাতের আসা উজ্জল হয়ে যাই। ( মুজাদ্দিদ আলফেসানী রহঃ)
★ মুখে তালা দিয়ে রাখ সকাল থেকে সন্ধা পয্যন্ত
লক্ষ রাখ একটি অপ্রয়োজনীয় কথাও যেন মুখ থেকে বের। না হয়।( হযরত থানভী রহঃ)
★ জীবনের প্রতিটি দিনকেই তোমার শেষদিন মনে
করিও। ( কেরমানী)
★ দশ সের চাউল ভিক্ষা দেওয়া অপেক্ষা ছেলে - মেয়েদের আদব- কায়দা শিক্ষা দেওয়া উত্তম।
;
★ যার অন্তরে সরিসা পরিমানও অহংকার আছে
সে কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।(হাদিস)
★ দান খয়রাত প্রদানকারী আল্লাহর নিকটবর্তী এবং কৃপন লোক আল্লামা হতে দুরবর্তী।( হাদিস)
★ সদর দরজা দিয়ে যদি কেও জান্নাতে প্রবেশপ্প করতে চায়, সে যেন পিতা-মাতার খুশি করে।
(আল হাদিস) "
★ মানুষের জীবনে যা অর্জত হয়,তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে সুন্দ্রর সভাব চরিত্র। ( আল হাদিস)
!!! শ্রেষ্ঠ ইমানী নসিহত !!!(৪)
************************
★ বান্দা যতক্ষন নামাজে থাকে ততক্ষন নেকি তার
মাথার উপর ঝরতে থাকে।( তিরমিজী)
★ নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে- ই
বেশি সম্মানিত মর্জাদা সম্পন্ন যে পরহেজগার।
( হুজরাতঃ১৩)
★তোমারা যেখানেই থাক-মৃত্যু তোমাদের কাছে আসবেই। যদিও মজবুত কেল্লার ভিতর থাক না কেন। ( সুরা নিসাঃ ৭৮ আয়াত)
★মু'মিন ব্যক্তির জন্য এতটুকু এলম অন্তত অর্জন
করতে হবে যতটকু দ্বারা সে আল্লাহ কে ভয় করতে
শেখে। ( ইবনে সাত্তার রহঃ)
★ নিজেকে বড় বুব্ধিমান ভেবোনা।আল্লাহ কে ভয়
কর এবং সকল পাপাচার বর্জন কর।( হঃআলী রাঃ
★ দুনিয়া শয়তানের দোকান।অতএব সাবধান।তার
দোকান থেকে কোন জিনিস খরিদ কর না।কারন
সে,তার পরিবর্তে তোমার অমুল্য ইমান কেড়ে নিবে।
( ইয়াহিয়া মায়াজ)
★ দুনিয়ার এই ক্ষনস্থায়ী জীবন আল্লাহ পাক সুধু
মাত্র।মানুষ কে পরীক্ষার জন্য সৃস্টি করেছন।
( হযরত ইমাম হোসাইন রাঃ)!
★ কোন মু'মিন বান্দার অন্তরে দুঃখ বা কষ্ট দেয়া কাবাঘর পনের বার ভেঙে ফেলা অপেক্ষা বড়
গুনাহের কাজ। ( আল হাদিস)
★ দুনিয়া একটি সুমুদ্র আখেরাত উহার অপর পাড়
উহা পার হবার জন্য নৌকা হল পরহেজগারি। সকল মানুষই মুসাফির। ( আবু আমর নাহীল) রহঃ
★ দুনিয়ার স্বার্থের বশবর্তী হয়ে যারা আখেরাত কে
ভুলে যাই তারা কখন ভাল হতে পারেনা।সে সব লোককেই কেবল ভাল বলা যায়,যার দুনিয়া ও
আখেরাত উভয় জীবনের স্বার্থ চিন্তা করে কাজ
করে।( হযঃআবু বকর রাঃ)
★ দুনিয়া হাতে রাখা যায়েজ, পকেটে রাখা যায়েজ,
কোন সৎকাজের নিয়তে উহা অর্জন করা যায়েজ,
কিন্তু তা অন্তরে রাখা যায়েজ নয়।(হযঃবড় পীর রহ
!!! শ্রেষ্ঠ ইমানী নসিহত!!!(৫)
********************** দুনিয়ার লোভ লালসা হতে বাচতে চাইলে মৃত্যু সামনে রাখ তাহলে বাচতে পারবে।( ইমাম শাফী রহঃ)
মানুষ যখন বুড়ো হয়ে যায় তখন দুটি জিনসের প্রতি লোভ বৃব্ধি পায়,একটি টাকা পয়সা অপর টি দীর্ঘ জীবন।
(আল হাদিস)
* মানুষ যখন আল্লাহকে ভয় করতে শেখে তার অন্তরে কোন মানুষের ভয় ভিতি থাকেনা। ( ইবনে সীনা)
* যদি তোমরা ইমান দার হয়ে থাক তবে
আল্লাহ পাকের উপর ভরষা কর।( আল কোর'আন)
* যে ব্যক্তি ওয়াদা করে তা রক্ষা করেনা
তার ইমান নাই। ( আল হাদিস)
* যে ব্যক্তি পরিতৃপ্ত সহাকারে খানা খায়
অথচ তারই প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে
সে ইমান দার নয়।(জামে সগীর)
* তুমি যদি তোমার পিতা মাতাকে ইজ্জত সম্মান কর,তাহলে তোমার সন্তান সন্ততিও তোমাকে সম্মান করবে
( হযরত আলী রাঃ)
* ঝরনার পানিতে যেরুপ মাটি সরস ও
উর্বর হয়ে ওঠে,তেমনি আলেম এবং ওলী আউলীয়াগনের সহচর্যে মানুষের
হৃদয় - মন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ( ইবনে বুলতান)
* অন্যের দোষ ত্রুটি খোঁজ করতে যেওনা।তাহলে তারাও তোমার দোষ খুজতে শুরু করবে।(হযরত ইশা আঃ)
* যারা তোমার গিবত গায় তারা তোমার প্রজা, কেননা নিজেদের কষ্টার্জিত নেকি
নিয়মিত তোমার অংশ দিতেছে।(হযঃবড় পীর রহঃ)
* পিতা- মাতার অবাধ্যাচারন করলে তার পাপ খকনো খন্ডিত হয়না।( হাদিস)
* কেও যদি হায়াত বৃব্ধি এবং রুজীতে বরকত চায়,তবে তার উচিত পিতা- মাতার সাথে সৎব্যবহার করা।
( হাদিস)
!!!হযরত বেলালের। কাহিনী!!!
*************************ণবী করীম ( সঃ) এর সত্যি কার আশেক হযরত বেলাল(রাঃ) মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন ছিলেন।
প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে জন্য তিনি প্রানের সব
টুকু দরদ দিয়ে আবেগঢালা সুরে আযান দিতেন।
ইনিই সেই হযরত বেলাল যাহার সম্পর্কে হযরত নবী করীম ( সঃ) ফরমায়েছেন- আমি সবে মেরাজে
যখন বেহেস্তে ভ্রমন করিতেছিলাম,তখন বেলালকে
আমার আগে যাইতে দেকিলাম।তখন আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম- হে বেলাল।তুমি দুনিয়ায় কোন আমল করিয়া থাক,যা বরকতে আজ তোমাকে আমার আগে আগে চলিতে দেখি-
য়াছি? তদুত্তরে হযরত বেলাল রাঃ বলিলেন দুই
রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু " নামাজের বরকতে।
কেহ হইতো প্রশ্ন করিতে পারেন যে, তবে কি হযরত
বেলাল নবী করীম (সঃ) এর চেয়ে উন্নত মর্জাদার
অধিকারী হইয়াছিলেন ? না,তাহা নয়।ওলামায়ে
কেরাম বলেন শবে মেরাজে হযরত বেলালের নবী-
জির (সঃ) আগে চলাটা মখদুমের আগে খাদেমের
অর্থাত। মনিবের আগে খাদেমের চলা ছিল।তাহাতে
খাদেমের মর্যাদা মনিবের চেয়ে বাড়িয়া যায় না।
যাহা হউক, হযরত বেলাল রাঃ ছিলেন "হাব'শ বা
অবিসিনিয়ার অধিবাসী একজন অনারব।সেজন্য
আরবি অক্ষরের সঠিক উচ্চারণ তাঁহার পক্ষে সম্ভব
হইত না এবং তিনি আযান দেয়ার সময় 'আশহাদু’
সব্দকে 'আছ,হাদু বলিতেন।আযানের মধ্যে এই সব্দটা সঠিক উচ্চারিত না হওয়ায় কয়েকজন সাহাবি একদা নবী করীম সঃ খেদমতে আরজ
করিলেন- ইয়া রাসুলুল্লাহ। হযরত বেলালের আযান
শুনিয়া কাফেরগন ঠাট্রা বিদ্রুপ করিয়া বলে যে,
মোহাম্মদ (সঃ) এমন কতগুলি জাহেল লোককে একত্র করিয়া মুসলমান বানায়েছেন যাহাদের আরবি উচ্চারন শুব্ধিজ্ঞান পযন্ত নাই।কাফের দের
এইসব বিদ্রুপাত্মক কথাই আমাদের লজ্জাবোধ হয়
তাই আমাদের আরজ হযরত বেলাল কে মুয়াজ্জিন
পদ হতে অপসারিত করিয়া তদস্থলে অপর কোন
যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করুন।
হযরত নবী করীম (সঃ) ফরমাইলেন- বেশ তোমাদের যাহা অভিমত তাহাই হউক। অতঃপর
হযরত বেলাল কে বাদ দিয়া অপর একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা হইল।আর এদিকে সারা রাত ধরে হযরত বেলালের কান্না আর থামেনি, হযরত বেলাল কাদেন আর বলেন ইয়া আল্লাহ আমি হাব শী গোলাম তুমিতো আমারে বানায়েছো আমি কালো সে তো তুমি করেছ আমার জবান তোতলা সেও তো তুমি বানায়েছো আমার দোস কোথাই আমার তো অপরাধ নাই। হযরত বেলালের রোনাজারিতে আল্লাহর রহমাতের দরিয়া উতলাইয়া উতলিয়া উঠিল। এদিকে নুতন মুয়াজ্জিন মাত্র
এক ওয়াক্ত নামাজের আযান দিয়াছিলেন, উহার
পরক্ষনেই আল্লাহ্ তা'য়ালার তরফ হতে হযরত নবী
করীম ( সঃ) এর সকাশে ফেরেস্তা আসিয়া বলিওলেন ( মস'নভী ঃ
( গোঁফতে হাতব বরদারে খইরিল উঁরী)
( চেঁ, ছবাব বেঁ বাংগা সুদ খানা খোঁদা)
অর্থাৎ আজ কি হইয়াছে ? মসজিদে আজ আযান
দেয়া হই নাই কেন ? উত্তরে আমার নবী বলেনঃ
গোঁফতে আযান আম,রুঝ সাঁদ বাসুর ঝুর
শঁদ মুচ্ছাল্ল রা রাহাত শাঁয়তান নফর
অর্থাৎ আযান তো আজ খুব জোরে শোরে ও মহা
আড়ম্বরে দেয়া হইয়াছে।তাহাতে মুচ্ছাল্লিগ্ন খুবই
আনন্দিত হইয়াছে এবং আযানের ধ্বনিতে শয়তান
ভাগিয়া গিয়াছে( হাদিস শরীফে আছে- আযানের
আওয়াজ যতদূর পয্যন্ত পৌছায়,সেই এলাকায় শয়তান আসিতে পারেনা এবং আযানের ধ্বনি শুনিলে শয়তান পালাইয়া যাই)( মসনভী)ঃ
নবী করীম (সঃ) এর উক্ত জবাব শুনিয়া ফেরেস্তা
পুনরায় বলিলেন-হযরত বেলাল যখন আযান দেন,
তাহার আযানের আওয়াজ আরশে- মুয়াল্লা পয্যন্ত
পৌছিয়া যাই,আর খোদ,আল্লাহ তা'য়ালা ফেরেস্তাদের সংগে লইয়া আগ্রহের সহিত শুনিয়া
থাকেন।যেহেতু আজ হযরত বেলালের আযানের
ধ্বনি শোনা যায় নাই,সেই জন্যে আল্লাহ তা'য়ালা
জানিতে চাহিয়াছেন যে,আজ কি মসজিদে আযান
দেয়া হয় নাই।
ফেরেস্তার মারফত এই ব্যপার জানিতে পারিয়া হয-
রত নবী করীম ( সঃ) সকলকে ডাকিয়া বিস্তারিত
ঘটনা শুনাইলেন।অতঃপর পুনরায় হযরত বেলাল
মসজিদে নব বীর মুয়াজ্জিন পদে বহাল হইলেন এবং শেষ পয্যন্ত এই মহান দ্বায়ীত্ব্য পালন করে গেলেন।
ভাবিয়া দেখুন, আল্লাহ তা'য়ালা যদি জাহেরী দিকটা
দেখতেন,তাহলে হযরত বেলালের অশুব্ধ উচ্চারনে
নারাজ হইতেন। এবং তাহার অপসরনে সন্তোষ
প্রকাশ করিতেন। কিন্তু ব্যপার হলো অন্য রকম।
তিনি মানুষের অন্তরের বিচার করিয়া থাকেন।
হযরত বেলালের দিল ও নিয়্যাত ছিলো নিস্কলুষ
তাই তাহার ভুল উচ্চারণ ও আল্লাহ পছন্দ করিয়াছে,তাহার অপসারণ অনুমোদন করেন নাই।
জাঁহেরী পর হক্ক নেহী কর- তা নজর
লেকে,বাতিন পঁর কর আয়্যে নজর
অর্থাতঃ ওহে বে খবর। আল্লাহ তা'য়ালা জাহেরী দিক দেখেন না,বরং ভিতরের দিক টায় তিনি দেকেন।হে বুব্ধিমান ইহাই হইতেছে আল্লাহ তা'য়ালার বিধান যে, দেল ব্যতীত অন্য কিছু তিনি
পছন্দ করেন না। তাই আসুন আমাদের কলুসিত
অন্তর নিস্কলুষ মহান আল্লাহ্র সমীপে হাজির হয়।
(ওমাতৌফিক ইল্লাবিল্লাহ)
No comments:
Post a Comment